আসসালামু আলাইকুম এবং আশা করি আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন। আজকে আমরা পবিত্র শবে মেরাজ কবে এবং শবে মেরাজ ২০২৪ কত তারিখে সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো। চলুন শবে মেরাজ কি, শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি, এবং শবে মেরাজ আরবি মাসের কত তারিখ তা জেনে নেই।
অন্যান্য রাতের চেয়ে এই রাত অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রতিটি মুসলমানদের জন্য। শবে মেরাজ এর রাত মূলত লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত, যাকে সাধারণত শবে মেরাজ বলা হয়, ইসলামে সেই রাত যখন আমাদের শেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) অলৌকিকভাবে আকাশে আরোহণ করেন এবং স্রষ্টার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
বাংলাদেশ সহ সারা দেশের মুসলমানরা এ রাতটি ইবাদতের মাধ্যমে উদযাপন করে। ইসলামে শবে মেরাজের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে, কারণ এই মেরাজের মাধ্যমেই ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ “নামাজ” মুসলমানদের জন্য অপরিহার্য (ফরজ) হিসেবে নির্ধারিত হয় এবং দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের বিধান সুনির্দিষ্ট করা হয়।
শবে মেরাজ কি
শবে মেরাজ বা লাইলাতুল কদর বলতে যা বুজি, ইসলাম ধর্মমতে লাইলাতুল মেরাজ বা মেরাজের রাত (যা সচরাচর শবেমেরাজ নামে অধিকতর পরিচিত) হচ্ছে যে রাতে ইসলামের নবি মুহাম্মদ (সা:) ঐশ্বরিক উপায়ে ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। অনেক মুসলমান এবাদত-বন্দেগির মধ্য দিয়ে এই রাতটি উদ্যাপন করেন। আবার অনেকেই ধর্মীয় বিষয়ে উপাসনা করে থাকে।
শবে মেরাজ শব্দের অর্থ কি
শবে মেরাজ: ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা শবে মেরাজ একটি ইসলামিক ঐতিহাসিক ঘটনা, যাতে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) সশরীরে ও আত্মায় ঊর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেছিলেন এবং আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করেছিলেন। এই ঘটনাটি ইসলামে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং তা মুসলমানদের জন্য একটি অনুপ্রেরণাস্বরূপ। মেরাজ শব্দের অর্থ মেরাজ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ “উচ্চতায় আরোহণ করা” বা “উর্ধ্বাকাশে যাওয়া”। শবে মেরাজ শব্দের অর্থ “ঊর্ধ্বাকাশে যাওয়ার রাত”।
শবে মেরাজ কি ও কেন
এখন আমরা জানবো শবে মেরাজ কি ও কেন পালন করা হয়। আমরা অনেকেই জানি না তাই আমরা শবে মেরাজ সম্পর্কে তারা আজকে দেখে নিতে পারেন। লাইলাতুন বা শব অর্থ হলো- রাত আর মেরাজ অর্থ ঊর্ধ্বগমন। শবে মেরাজ বা লাইলাতুল মেরাজের অর্থ দাঁড়ায়- ঊর্ধ্বগমনের রাত। ‘রজবের’ ২৭ তারিখ নবুয়তের দশম বর্ষে নবী কারিম (স.)-এর ৫০ বছর বয়সে পবিত্র মেরাজ সংঘটিত হয়। (সূত্র: সিরাতে মোস্তফা: আশেকে এলাহি মিরাঠি, ও তারিখুল ইসলাম: মাওলানা হিফজুর রহমান সিহারভি) পবিত্র মেরাজের যাত্রা শুরু হয় মসজিদে হারাম থেকে। হজরত জিব্রাইল (আ.) বোরাকে করে নবীজিকে বায়তুল মোকাদ্দাস নিয়ে যান।
সেখানে তিনি দুই রাকাত নামাজ পড়েন। ওই নামাজে নবীজি (স.) সব নবীর ইমামতি করেন। এরপর ঊর্ধ্বাকাশে যাত্রা করেন। যাত্রাপথে প্রত্যেক আসমানে পূর্ববর্তী সম্মানিত নবীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়। এরপর সিদরাতুল মুনতাহা হয়ে আরশে আজিমে মহান আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। পবিত্র মেরাজের রাতে বিশ্বনবী (স.) স্বচক্ষে বেহেশত-দোজখ দেখেছেন।
সর্বোপরি মহান রবের সঙ্গে পবিত্র দিদার লাভ করাসহ অবলোকন করেছেন সৃষ্টিজগতের অপার রহস্য। নামাজের বিধান রচিত হয় এ রাতেই। মেরাজের ঘটনা থেকে মুমিন খুঁজে পায় সঠিক পথের দিশা, লাভ করে আল্লাহর অপার অনুগ্রহ ও দ্বীনের অবিচলতা। প্রিয়নবী (স.) যে আল্লাহ তাআলার কাছে কত দামি ও মর্যাদার অধিকারী, তা এ ঘটনা থেকে স্পষ্ট হয়ে যায়। তাঁকে এমন মর্যাদা দান করা হয়েছে, যা অন্য কোনো নবীকে দান করা হয়নি। এ ঘটনার ফলে মুমিনের ঈমান মজবুত হয় এবং হৃদয়ে বিশ্বনবী (স.)-এর ভালোবাসা সুগভীর হয়।
শবে মেরাজ আরবি মাসের কত তারিখ
২০২৪ সালের হিজরি ১২ মাসের মধ্যে সপ্তম মাস রজব মাস। এই পবিত্র রজব মাসের ফজিলত ও আমল অনেক এবং এই রাতে কোন ইবাদত অন্যান্য দিনের থেকে উত্তম। আল্লাহর দেওয়া হিজরি ১২ টি মাসের মধ্যে ৪টি মাস উত্তম আর তার মধ্যে একটি হল রজব মাস। পবিত্র রজব মাসে সব ধরনের যুদ্ধ-বিগ্রহ হারাম করা হয়েছে।
এই পবিত্র মাসে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) আল্লাহর নির্দেশে ৭ আসমান ভ্রমণ করে ছিলেন। এই রজব মাসেই পবিত্র শবে-মেরাজ পালন করা হয়। রজব মাসের ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে মিরাজের নামাজ পড়া ও ২৭ তারিখ পবিত্র শবে-মেরাজ পালন করা হয়। এই মাসের বিশেষ কিছু দিনগুলোতে রোজা রাখার নির্দেশ আছে।
শবে মেরাজের দোয়া
শবে মেরাজের জন্য নির্দিস্ট কোনো দোয়া উল্লেখ নেই। আপনি চাইল এদোয়া পড়তে পারেন অথবা না পড়লে সমস্যা নেই। তবে এই রাতে দোয়া পড়লে দোয়া কবুল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আপনি চাইলে নিম্নলিখিত দোয়া পড়তে পারেনঃ
“سُبْحَانَ الَّذِي أَسْرَىٰ بِعَبْدِهِ لَيْلًا مِّنَ الْمَسْجِدِ الْحَرَامِ إِلَى الْمَسْجِدِ الْأَقْصَى الَّذِي بَارَكْنَا حَوْلَهُ لِنُرِيَهُ مِنْ آَيَاتِنَا إِنَّهُ هُوَ السَّمِيعُ الْبَصِيرُ”
এই দোয়ার অর্থ হলো:
“পবিত্র আল্লাহ, তিনি যিনি আমার বান্দাকে শবে মেরাজে নিয়ে চলেছেন, যিনি মসজিদুল হরাম থেকে মসজিদুল আকসা যাত্রা করেছেন, যার চারপাশে আমরা আমার আয়াতগুলি দেখাতে দিয়েছি। নিশ্চয় আপনি শুনতেন এবং দেখতেন।”
এটি একটি সুন্দর দোয়া যা শবে মেরাজের মুবারক দিনে পড়া হতে পারে। শবে মেরাজের গুরুত্ব ও ফজিলত
শবে মেরাজ কত তারিখে ২০২৪
শবে মেরাজ এর হাদিস শবে মেরাজ নিয়ে অনেক হাদিস রয়েছে যেখানে রাসূল(সঃ) এর সাথে ঘটে যাওয়া অনেক বর্ণনা রয়েছে। এক্তি হাদিসে পাওয়া জায়, রাসুলুল্লাহ (সঃ) মেরাজ এর সাথে ঘটে যাওয়া সব কাহিনীগুলো তার প্রিয় সাহাবী হযরত আবু বক্কর (রাঃ) এর সাথে আলোচনা করেছিলেন এবং তিনি তা সাথে সাথে বিসসাস করেছিলেন।
শবে মেরাজের দিনে আমাদের কি করণীয় এই রাতে মহানবী(সঃ) আকাশে ভ্রমন করেছিলেন বিধায় এই রাত অনেক গুরুত্তপূর্ণ। এই রাতের ফজিলত রয়েছে যেগুলো আমরা পালন করতে পারলে আমাদের জন্য মঙ্গলজনক। এই রাতে আমাদের করণীয়ঃ রাতে নফল ইবাদত করা নবিজী(সঃ) এর উপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। কোরআন পাঠ করা। ইস্তিগফার করা। বেশি বেশি তাসবিহ পাঠ করা ইত্যাদি।